গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কি এবং কেন হয়? জেনে নিন মুক্তির উপায়!
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কি এবং কেন হয়? জেনে নিন মুক্তির উপায়!
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যারা ভোগেন তারা ভালোই জানেন বিষয়টি কতোটা অস্বিস্তিকর। এটি কিন্তু আসলে কোনো রোগ নয়। এটা সাধারণত কিছু বদভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে।
অন্য যেকোনো রোগের চেয়েও এটা মাঝে মাঝে খারাপ আকার ধারণ করতে পারে। কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একদিনে হয়তো পুরোপুরি নিরাময় হবে না। কিন্তু ক্রমাগত অভ্যাস করে গেলে আপনি একদিন পুরোপুরি এসিডিটি মুক্ত থাকতে পারবেন।
আসুন আমরা জেনে নিই- গ্যাস্ট্রিক কি এবং কেন হয়? আর যেভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
গ্যাস্ট্রিক আসলে কি?
বৈজ্ঞানিকভাবে যে জিনিসটিকে গ্যাস্ট্রিক বলা হয়, সেটির আসল নাম হচ্ছে পেপটিক আলসার ডিজিজ বা পিইউডি। পাকস্থলী, ডিওডেনাম ও ইসোফেগাস— এই তিনটির যেকোনো জায়গায় যদি অ্যাসিডের কারণে ক্ষত হয়, এটাকে বলে পেপটিক আলসার ডিজিজ। এবং যখন বলা হচ্ছে গ্যাস্ট্রিক আছে, তখন বোঝা যাচ্ছে, তার পেপটিক আলসার রয়েছে। এটা পাকস্থলী বা ডিওডেনামে হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কেন হয়?
গ্যাস্ট্রিক সমস্যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি বা রোগীর বেলায় বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে বা ভাজা-পোড়া-তেলজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। নন-আলসার ডিসপেপসিয়া, এটাতে গ্যাস হয় বেশি, জ্বালা হয় বেশি, পেট ফুলে থাকে বেশি—সেটাতে ভাজা-পোড়া সাংঘাতিক ক্ষতিকর। তবে যদি এটি আলসার হয়ে থাকে, যেহেতু আলসারের একটি চিকিৎসা রয়েছে এবং অনেক সময় চিকিৎসা ছাড়াও এরা ভালো হয়ে যায়, এ জন্য এখানে অনেক বেশি সমস্যা হয় না। তবে ওই খাবারগুলো লক্ষণকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যার ব্যথা রয়েছে, তার ব্যথাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যার জ্বলা রয়েছে, সেটা বাড়িয়ে দিতে পারে। এই বিষয়গুলো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য আজকাল চিকিৎসার বিষয়টি এমন দিকে যাচ্ছে যে ব্যক্তির যা মনে চায় তাই খাবে, চিকিৎসক শুধু ওষুধ দিয়ে ভালো করে দেবে। খাওয়ার সীমাবদ্ধতা ছাড়া চিকিৎসা করতে চাই। আমরা আশা করছি, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এমন চিকিৎসা এসে যাবে, যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে খাবারের বেলায় বাছতে হবে না।
নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী খাবারের কথা বলতে গেলে, রিফ্লাক্স বলে মানুষের শরীরে একটি জিনিস রয়েছে, আমি যদি প্রতিদিন ২টার সময় ভাত খাই, একদিন যদি না খাই সে সময়ে পেট অ্যাসিডে ভর্তি হয়ে যাবে। তবে আমি যদি সেখানে দেরি করে খাই, আমার লক্ষণটা বেড়ে যাবে। এ জন্য নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার উপকার রয়েছে। আমাদের শরীর একটি অভ্যাসের মধ্যে চলে যায়। অভ্যাসের ব্যতিক্রম হলেই সমস্যা হয়। তবে ডিওডেনাল আলসার যেটা, সেখানে যদি প্রায় প্রায় খাবার দেয়া হয়, তাদের লক্ষণগুলো কমতে সাহায্য হয়। তবে এখন যেই চিকিৎসা পেপটিক আলসারের রয়েছে, এখানে খাওয়ার বিষয়ে বাছতে হবে না। এর পরও আমরা বলি, আপনার যেটা খেলে অসুবিধা মনে হয়, সেটি এড়িয়ে যান।
মানসিক অশান্তি– এক্সাইটি, স্ট্রেস, মানসিক কষ্ট, মানসিক ভাবে কোন কিছু নিয়ে টেনশন, চাপ, এক্সাইটি, কষ্ট, আঘাত প্রভৃতি গ্যাস্ট্রিকের করণ হতে পারে।
অখাদ্য– অখাদ্য থেকে অধিকাংশ গ্যাস্ট্রিক হতে দেখা যায়। অনেকে বলেন না খেয়ে থাকলে গ্যাস্ট্রিক হয় যা একদমই ঠিক না। রোজার মাসে রোজাদার দীর্ঘ ১২/১৩ ঘন্টা যে কোন ধরনের খাবার থেকে বিরত থাকে তখন কারো গ্যাস্ট্রিক হতে দেখা যায় না। বরং তখন গ্যাস্ট্রিক ভালো হয়ে যায়। এর কারণ হলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে অখাদ্য খাবার তেকে গ্যাস্ট্রিক হতে দেখা যায়। অখাদ্য যেমন:- কন্ডেস মিল্ক নামক পামওয়েলের গাদ, টেষ্টি সল্ট, সাদা মিহি দানার লবণ, সাদা চিনি, ডালডা বা যে সকল খাদ্যের মধ্যে ডালডা আছে, কাপড়ের রং, ভেজাল মসলা, ভেজাল তৈল, অতিরিক্ত তৈল, পচা-বাশি, যে কোন প্রকার কেমিক্যারযুক্ত খাবার, হাইড্রোজ বা হাইড্রোজ মিশ্রিত খাবার, সোডা বা সোডা মিশ্রিত খাবার, ভেজাল তরল বা দুধ, কড়া কফি, কড়া চা প্রিভৃতি।
খাবারের পরিমান– আমাদের অধিকাংশরাই অতিরিক্ত খাওয়াটাকে ক্রেডিট মনে করি। শুধু খাওয়া নয় খাওয়ানোটাও উত্তম অথিতিয়েতার নিদর্শন হিসেবে ধরে নেই। অথচ অতিরিক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম কারণ। ইসলামী নিয়ম মতে দু’বেলা আহার উত্তম এবং প্রতিবেলাতে ব্যক্তির মোট খাবারে পরিমানের ৩ বাগের একভাগ খাবার, একভাগ পানি ও একভাগ খালি রেখে খাবার সম্পন্ন করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
কথপ কথন– খাবারের সময় কথা বলা থেকে যতদূর সম্ভব বিরত থাকতে ইসলামের নীতিতে বলা হয়েছে। এমন কি খাবার গ্রহণের সময় সালাম বিনিময় থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খাদ্য গ্রহণের সময় মনোযোগ অন্য কোন স্থানে চলে গেলে মস্তিস্ক বুঝতে পারে না প্লেটের খাবারের জন্য কতটুকু এসিড নিযর্গত করে পাকস্থলিতে দিতে হবে। ফলে খাদ্য পাকস্থলিতে গিয়ে নানা ধরনের বিপত্তি করে এবং হজম হতে বাধা দান করে।
এক দফায় খাবার নেওয়া– হিন্দু ধর্মমতে খাবার একবারই প্লেটে নিতে হবে। বার বার প্লেটে খাবার নেওয়া যাবে না। এত নির্ধারিত খাবার দেখে মস্তিস্ক সঠিক পরিমান পাচকরণ নিঃসরণ করে। অতিরিক্ত খাবার খেলে মস্তিস্কের সঠিক পরিমান পাচক রস নিঃসরণ করতে পারে না।
ঘুম– ঘুম এর সমস্যার কারণে বা কোষ্টকাঠিণ্য থাকার কারণেও গ্যাস্ট্রিক দেখা দিতে পারে।
লিভার ফাংশন– গ্যাস্ট্রিক দেখা দিতে পারে লিভার ফাংশন কোন কারণে গোলযোগে দেখা দিলে।
ধূমপান– ধূমপান বা বিভিন্ন প্রকার ঔষধ সেবনের কারণে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
বেশি মসলাযুক্ত খাবার পছন্দ করেন। বেশি মসলাযুক্ত খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়।
নিয়ম মতো খাবার গ্রহণ না করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
অনেক তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে এই সমস্যা হয়।
ধূমপান করলে হজম শক্তি কমে যায়, ফলে দেখা দিতে পারে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা।
রাতের খাবার খেয়ে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লে।
ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করার ফলে হতে পারে এই সমস্যা।
সকালে খালি পেটে চা বা কফি অথবা অ্যাসিড জাতীয় ফল খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা।
ডায়াবেটিস রোগী যাদের হজম শক্তি কম, তারা ভারী খাবার গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
পরিমাণের তুলনায় কম পানি গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাত হলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় এর ফলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
উপরোক্ত কারন গুলোকে ভাল ভাবে পর্যালোচনা করে নিয়মমত খাদ্যাভাস অনুশীলন করলেই গ্যাস্ট্রিকের জন্য কোন প্রকার ঔষধ সেবণ করতে হবে না। কারণ গ্যাস্ট্রিক কোন রোগ নয়। এটা পরিপাকতন্ত্রের ব্যাঘাত জনিত একটি উপসর্গ মাত্র।
গ্যাস্ট্রিক হলে করণীয়:-
১. খাবার খাওয়ার পরে– খাবার খাওয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়বেন না। কারণ খাবার হজম না হলে পেটে গ্যাস তৈরী করে।
২. তেল জাতীয় খাবার– ডুবো তেলে ভাজা যে কোন ধরণের তৈলাক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩. শাক-সবজী:- যে সবজীগুলো সহজে হজম হয় না যেমন, ব্রকলি, ফুলকপি, বাধাঁকপি, পালং শাকে থাকা রাফিনোজ নামক উপাদান পেটে গ্যাস তৈরী করে।
৪. গ্যাস হলে যে কোন ধরণের ডাল যেমন মসুরের ডাল, ছোলা-বুট, সয়াবিন ইত্যাদি খাবেন না, কারণ এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন,সুগার এবং ফাইবার যা সহজে হজম হতে চায়না এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার উপায়:
- আদার ব্যবহার : আদাতে এমন কিছু উপাদান আছে যার কারণে আপনার বদ হজম, জ্বালা পোড়া, বুকে ব্যথা কমে যেতে পারে। দেখুন এটির ব্যবহার। যেমন :
> আদা কুচি কুচি করে কেটে পানির মধ্যে মিশিয়ে তারপর পানি ফুটান। পানি ফুটানো হলে তা ১০ মিনিটের মতো নামিয়ে রাখুন এবং দিনে ২/৩ বার চায়ের মতো পান করুন । এটির সঙ্গে মধু মিশালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
> আদা বেটে রস করুন এবং এটি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে দুপুর ও রাতের খাবারের আগে খেয়ে নিন।
> আপনার যখন ইচ্ছা হয় তখন একটু আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার শরীর ঠান্ডাও থাকবে।
> আদা সবচাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার যা গ্যাসের সমস্যা দূর করে। আদা চুষে খেলে অথবা চা বানিয়ে খেলে এই কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
- দইয়ের ব্যবহার : আপনি প্রতিদিন একটু করে দই খান। এটি পেটের ব্যাকটেরিয়া দূর করে । ব্যাকটেরিয়া হলো গ্যাস্ট্রিক সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। কলা, মধু আর দই একসঙ্গে মিশিয়ে এটি প্রতিদিন খেতে পারেন। দই অথবা মাঠা- দইয়ের মধ্যে রয়েছে প্রোবায়টিক উপাদান যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে গ্যাসের ব্যথা কমিয়ে আনে।
- আলুর ব্যবহার : গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আলুর রসের ব্যবহার করতে পারেন। যেমন :
> আলু বেটে রস করে নিন। এরপর আলুর রস আর গরম পানি একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন দুপুর ও রাতের খাওয়ার দু ঘন্টা আগে খেয়ে নিন।
- পানির ব্যবহার : সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পানির ব্যবহার। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে একদম খালি পেটে পুরো পেট ভর্তী করে পানি পান করুন। এভাবে ৩ সপ্তাহ পার করলেই উত্তম ফল পাবেন।
- ব্যায়াম বা হাটাহাটি করুন- নিয়মিত ব্যায়াম অথবা সময় নিয়ে হাটাহাটির অভ্যাস করুন। এতে পেটের মধ্যে গ্যাস জমতে পারবে না।
- শসা– পেট ঠান্ডা রাখতে শসার তুলনা হয় না। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের চাপ কমিয়ে আনে এবং বুকের জ্বালা দূর করে।
- লবঙ্গ– লবঙ্গ তাৎক্ষনিক গ্যাসের ব্যথা কমিয়ে আনে। ২/৩ টি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চুষলে অথবা সমপরিমান এলাচি ও লবঙ্গ গুঁড়া খেলে অ্যাসিডিটির জ্বালা এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
- আসন– খাবারের সময় পা ভাজ করে পেটে চাপ রেখে খাওয়া স্বাস্থ্যকর, এতে গ্যাস্ট্রিক হয় না, ইসলামী কায়দায় হাঁটু ভাঁজ করে খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, সাময়িক গ্যাসের ব্যথার জন্য উল্লেখিত উপায়গুলো অবলম্বনের পরও যদি ব্যথা না কমে তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন।
গ্যাস্ট্রিক বলে চিকিৎসাশাস্ত্রে কিছু নেই তবে …
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কখনো ভোগেনি, এমন মানুষ দেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। পেট ফাঁপা, পেট চিনচিন করা বা সমস্যার কারণে অনেকে দিনের পর দিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে থাকে, কিন্তু সেরে ওঠার নাম নেই। কিন্তু কেন?
আসলে গ্যাস্ট্রিক বলে চিকিৎসাশাস্ত্রে কিছু নেই। পেটের যেকোনো সমস্যাকেই সাধারণ মানুষ গ্যাস্ট্রিক মনে করে থাকে। তবে পেপটিক আলসার এবং নন–আলসার ডিসপেপসিয়া নামে দুটি সমস্যা আছে, যেগুলোকেও অনেকেই গ্যাস্ট্রিক বলে অভিহিত করে থাকি। এগুলো কেন হয় আর এ থেকে রেহাই কীভাবে পেতে হয়, তা না জানলে কেবল মুড়ি–মুড়কির মতো গ্যাসের ওষুধ খেলে চলবে না। মনে রাখবেন, দীর্ঘ মেয়াদে টানা গ্যাস্ট্রিকের বড়ি খাওয়ার নানা জটিলতা আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
পেপটিক আলসার মানে পাকস্থলীতে বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে ঘা বা আলসার। এর কারণ দুটি। একটি হচ্ছে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি (এইচ পাইলোরি) নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যটি হচ্ছে এনএসএআইডি–জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন। যদি পাকস্থলীতে এই বিশেষ জীবাণু হেলিকোব্যাকটার পাইলোরির সংক্রমণ থাকে, তবে সাধারণ গ্যাসের ওষুধে সেটা পুরোপুরি সেরে যাবে না, আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও মিটবে না। এ ক্ষেত্রে ভালো হওয়ার জন্য এইচ পাইলোরিনাশক অ্যান্টিবায়োটিক ও ওষুধ খেতে হবে।
এইচ পাইলোরি সাধারণত ছোটবেলায় পানি ও খাবারের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। তারপর পাকস্থলী ও এর ঘনিষ্ঠ অংশে প্রদাহ সৃষ্টি করে। কখনো আলসার বা ঘা হয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির সারা বছর পেটের নানা সমস্যা, ফাঁপা, ব্যথা, জ্বলা ইত্যাদি উপসর্গ লেগেই থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে বয়সভেদে শতকরা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ এইচ পাইলোরি সংক্রমণে আক্রান্ত। তবে আশার কথা হলো, যারা এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, তাদের বেশির ভাগেরই পেপটিক আলসার হয় না। এর জন্য অন্য আরও কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকি আছে।
পেপটিক আলসার কীভাবে শনাক্ত করা যায়
কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজেই এইচ পাইলোরির সংক্রমণ শনাক্ত করা যায়। যেমন: ইউরিয়া ব্রেদ টেস্ট, রক্তের অ্যান্টিবডি টেস্ট (অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি আই জি-জি), স্টুল অ্যান্টিজেন ইত্যাদি। কখনো কখনো এটি শনাক্ত করতে এন্ডোস্কপি পরীক্ষাও করা হয়ে থাকে।
যখন অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি চিকিৎসা দরকার
এইচ পাইলোরির সঙ্গে যদি পেপটিক আলসার অথবা গ্যাস্ট্রাইটিস থাকে, তবে তখন এইচ পাইলোরিনাশক অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। আন্দাজে সারা বছর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বা অ্যান্টাসিড সেবন করলে লাভ হবে না। এটি কয়েকটি সমন্বিত অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদি কোর্সের মাধ্যমে সেবন করতে হয়।
তা ছাড়া অ্যাট্রোপিক গ্যাস্ট্রাইটিস, মাল্ট লিম্ফোমা ও গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পর অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। যাদের খুব নিকটজনের গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার হয়েছে, তাদের যদি এইচ পাইলোরি থাকে, তখন আলসার না থাকলেও অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি চিকিৎসা নিতে হবে।
পেপটিক আলসারের জটিলতা
এইচ পাইলোরি সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা না নিলে এ থেকে পেপটিক আলসার, অ্যাট্রোপিক গ্যাস্ট্রাইটিস, মাল্ট লিম্ফেমা ও গ্যাস্ট্রিক (পাকস্থলীর) ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
পেপটিক আলসার প্রতিরোধের উপায়
এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ বন্ধ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। তবে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং খাবার ও পানীয় গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করলে অনেক সময় সুফল পাওয়া যেতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের রোগীরা যে ফল ভুলেও খাবেন না
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ক্ষতিকর একটি ফল হচ্ছে লিচু। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের লিচু না খাওয়া ভালো।
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনে যেসব সমস্যায় পড়তে পারেন
একটা অ্যাড ছিল বেশকিছু দিন আগে। এক ভদ্রলোক শিঙাড়া খেল আর পেট ফুলে শার্টের বোতাম খুলে গেল! ব্যাপারটা কিন্তু কিছুটা বাস্তব। সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশে এই পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যাকে সাধারণ মানুষ গ্যাস্ট্রিক বলে।
গ্যাস্ট্রাইটিস কিংবা গ্যাস্টিক আলসার কি?
সাধারণত নাভির ওপরে পেটে ব্যথা হবে।
খালি পেটে কিনবা ভোররাতের দিকে ব্যথা তীব্র হয়।
গলা-বুক-পেট জ্বলে, টক ঢেকুর ওঠে।
ঝাল-তেল-মসলাজাতীয় খাবারে ঝামেলা বেশি করে।
আমাদের দেশে যে কোনো পেটে ব্যথা মানেই গ্যাস্ট্রিক। তাই যে কোনো কারণেই পেটের সমস্যা হোক না কেন Seclo/Loscetil/Maxpro/Sergel/Pantonix/Esotid/PPI/Nuprazol/Probitor ইত্যাদি খাও। আমার মনে হয় পুরো পৃথিবীতে এত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ অন্য কোনো দেশে খাওয়া হয় কিনা সন্দেহ আছে।
আমি দেখেছি, প্রস্রাবের ইনফেকশনের জন্য তলপেটে ব্যথা তার জন্য আন্টি আলসারেন্ট খাচ্ছে! যাই হোক শুরু করেছিলাম পেট ফোলা নিয়ে। আমাদের দেশে ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ যে কারণে অপ্রয়োজনীয় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খায় সেই সম্যসা হচ্ছে:
একটু খাবার খেলে পেট ভরা ভরা লাগে, অস্বস্তি লাগে ক্ষুদা লাগে না, এক বেলা খেলেই মনে হয় ১ সপ্তাহের খাওয়া খেয়ে ফেলেছে, পেট ফুলে যায়, অনেকের তো ঢোল হয়ে যায়।
শব্দ করে ডেকুর হয়, গ্যাস বের হয় মুখ দিয়ে ও পায়ুপথ দিয়ে, অনেকের গ্যাস ওপরের দিকে চাপ দেয়; বুক ধড়ফড় করে ওঠে! এমনকি অনেকের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়!
দুধ কিনবা দুধের তৈরি খাবার (সেমাই, কাস্টার্ড, আইসক্রিম ইত্যাদি), আটা দিয়ে তৈরি খাবার (পরোটা, কেক, শিঙাড়া, পাউরুটি ইত্যাদি) আর মশুরের ডাল খেলে সমস্যা বাড়ে।
আসলে ওপরের কোনো লক্ষণই আমাদের ভাষায় প্রচলিত গ্যাস্ট্রিক না, এখানে পেটে গ্যাস তৈরি হয় বেশি, এসব ক্ষেত্রে Omeprazole, Esomeprazole, lansoprazole, Rabeprazole এর কোনো ভূমিকা নেই।
অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের কুফল?
যারা প্রয়োজন ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন তাদের ভবিষ্যতে আয়রন, ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়ামের অভাব দেখা দেবে। এমনকি হাড় ক্ষয়, অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা সেই সঙ্গে শরীরে কিছু রোগজীবাণু প্রবেশের সক্ষমতা বেড়ে যাবে। এমনকি কিডনিতে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নিজের রোগ সম্পর্কে জানুন, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন, প্রয়োজন ছাড়া ওষুধ খাওয়া পরিহার করুন, সুস্থ থাকুন।
এখনো আপনার মনে কোন প্রশ্ন আছে? অথবা আমাদের থেকে কল পেতে চান?
তাহলে নিচের ফরমটি পুরন করুন, আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করবো, ইংশাআল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ০১৭১৬ ৯৮৮ ৯৫৩ / ০১৯১২ ৯৬৬ ৪৪৮ এই নাম্বারে কল করতে পারেন, অথবা ইমেল করতে পারেন hi@mahbubosmane.com এই ইমেলে, আমরা আপনাকে কোনভাবে সাহায্য করতে পারলে খুশি হব, ধন্যবাদ ।
মাহবুবওসমানী.কম এর সার্ভিস সমূহঃ
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- এসইও ও এসএমএম
- কন্টেন্ট রাইটিং
- ওয়েব ডেভেলাপমেন্ট
- গ্রাফিক ডিজাইন
- এফিলিয়েট ওয়েবসাইট
- ব্রান্ড প্রোমোশন
- অন্যান্য সার্ভিস
- কোর্স সমূহ