আজকের লেখায়, ১০ টি লাভজনক ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করবো। এই লেখায় ব্যবসা আইডিয়ার পাশাপাশি কিভাবে ও কত টাকা খরচ হবে তারও আইডিয়া দেয়া হবে।
৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা
১. ফ্রিল্যান্সিং
আপনার যদি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোন কাজের প্রতি বিশেষ দক্ষতা ও আগ্রহ থাকে তাহলে অল্প টাকা খরচ করেই আপনার সেবা বিক্রি করতে পারবেন। ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা করে সবচেয়ে বেশি ইনকাম করার পথ এটিই। তবে আপনাকে অবশ্যই ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি কাজের মধ্যে যেকোন একটি কাজে এক্সপার্ট হতে হবে।
কোন বিষয়ে এক্সপার্ট হওয়া ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং এ নিজের অবস্থান তৈরি করা যায় না। দক্ষতা থাকলে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে ( আপওয়ার্ক, ফাইভার) অথবা সরাসরি সেবাগ্রহীতার সাথে যোগাযোগ করেও আপনার কাজ বিক্রি করতে পারবেন।
কিছু ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটের তালিকা:
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য প্রয়োজন হবে:
- একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ- ৩০,০০০-৫০,০০০ টাকা।
- ইন্টারনেট কানেকশন।
- কোন বিশেষ দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বা অনলাইন কোর্স। ফ্রি কম্পিউটার শিক্ষা কোর্স।
- অনেকটা ধৈর্য, একাগ্রতা ও পরিশ্রম।
দক্ষতা থাকার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং এ মনোযোগী এবং পরিশ্রমী হলে মাসিক ৪০,০০০-৫০,০০০ হাজারের বেশি ইনকাম করা যায়।
২. পোল্ট্রি ফার্ম
হাঁস, মুরগী, কবুতর ইত্যাদি পোল্ট্রি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। পোল্ট্রি শিল্প বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত লাভজনক শিল্প। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগী, হাস, অন্যান্য পাখি ও ডিম অনেক চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
আপনার বাড়িতে একটু বাড়তি জায়গা থাকলে পোল্ট্রি সম্পর্কিত তথ্য জেনে শুরু করতে পারেন একটি ছোট খামার। প্রথমে, ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করে লাভবান হলে পরবর্তীতে তা বড় পরিসরে নেওয়া যায়।
পোল্ট্রি ফার্মের জন্য প্রয়োজন হবে:
- একটি হাঁস বা মুরগী পালনের ঘর- ২০,০০০-২৫,০০০ টাকা।
- প্রধান উপাদান পোল্ট্রির বাচ্চা। শুরুতে ২০০-৩০০ বাচ্চা ১২-১৫ হাজার টাকা।
- ফিড- ৫,০০০-৭,০০০ টাকা।
- ফিল্টার, পানি, বিদ্যুৎ, ও অন্যান্য খরচ- ৫,০০০-৭,০০০ টাকা।
একটি ব্রয়লার মুরগী ১ কেজি তৈরি করতে বাচ্চা ও খাবার খরচ সহ ১৩০ টাকার মতো খরচ হয়। পাইকারি দামে বর্তমানে ১ কেজি ব্রয়লার প্রায় ২০০ টাকা। ফার্ম শুরু করার পর কয়েকমাস কোন ইনকাম না হলেও তারপর থেকে বাচ্চা উৎপাদন, মাংস উৎপাদন ও ডিম বিক্রি করে ভালো ইনকাম করা সম্ভব।
৩. ছাগলের খামার
বিভিন্ন গবাদিপশুর মধ্যে ছাগল পালন খুবই সহজ ও বেশি লাভজনক। ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা করার জন্য ছাগল উৎপাদন করে নিজের আর্থিক অবস্থা অনেকটা ভালো করা যায়। আপনার বাড়ির আঙ্গিনায় একটি ছোট কাচারি ঘরে কয়েকটি ছাগলের বাচ্চা নিয়ে পালন করা শুরু করতে হবে।
ছাগলের খাদ্য ব্যয়ও তূলনামূলক ভাবে অনেক কম। দিন দিন গবাদিপশুর চাহিদা ও দাম কতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আমরা বর্তমান বাজার পরিস্থিতি থেকেই জানতে পারি। ছাগল পালন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে শুরু করে দিতে পারেন।
ছাগলের খামারের জন্য প্রয়োজন হবে:
- একটি ছোট ঘর- ১৫,০০০-২০,০০০ টাকা।
- ৫-৮ টি ছাগল ছানা। প্রতি পিস ৩,৫০০-৪,০০০ টাকা করে।
- ছাগলের খাবার – ৩-৫ হাজার টাকা। এছাড়াও ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান নিয়ে এই খামার শুরু করা যায়।
একটি ছাগল ৬ মাস পালন করে বিক্রয় করলে ছাগলের মূল্যসহ ৫,৫০০ টাকার মতো। এবং বিক্রয় করা যাবে প্রায় ৮-৯ হাজার টাকা। পরবর্তীকালে মা ছাগল রেখে বাচ্চা উৎপাদন করলে আরও বেশি লাভবান হওয়া যায়।
৪. মাছ চাষ
আপনার বাড়ির পাশে একটি ছোট পুকুর থাকলে শুরু করতে পারেন মাছ চাষ করার ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা। চাষ শুরু করার পূর্বে পুকুরের পানি পরিশোধন করে তাতে জৈব সার ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে পুকুরের তলদেশ, পানির PH ইত্যাদি ঠিক করতে হবে।
তারপর নির্দিষ্ট মাছে পোনা বাছাই, সে অনুপাতে খাদ্য ও ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন ভালো করতে পারলে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায়।
মাছ চাষ শুরু করতে প্রয়োজন হবে:
- একটি পুকুরের প্রস্তুত। এতে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হবে।
- মাছের পোনা সংগ্রহ করতে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হবে।
- মাছের খাবার ও অন্যান্য উপাদান ৮-১০ হাজার টাকা।
এগুলো নিয়ে একটি ছোট পুকুরে মাছ চাষ শুরু করা যায়। ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করে মাছ চাষ করলে প্রায় ৯০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকা বিক্রি করা যায়।
৫. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট
বর্তমানে শিক্ষিত যুবকদের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসার প্রতি বিশেষ আকর্ষন লক্ষ করা যায়। নিজের এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠান-আয়োজনে সাজানো ও অন্যান্য ব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়ে নির্দিষ্ট ম্যানেজমেন্ট ফি নেওয়া যায়। কিছু মূলধন নিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করলে এককালীন খরচেই দীর্ঘদিন এ ব্যবসা পরিচালনা করা যায়। বেশি কাজ পেতে প্রচার করতে হবে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসার জন্য প্রয়োজন হবে:
- ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে সাধারন ধারনা।
- লাইটিং ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়ের মূলধন।
- প্রচারনার কাজে খরচ। ও
- কাজের সময় লোকবল খরচ।
এ ব্যবসাতে এককালীন খরচ থাকায় পরবর্তীতে প্রাপ্ত ফি এর সবটাই ইনকাম হিসেবে থাকে। তাই প্রতি সপ্তাহে কাজ পেলে মাসে ৩০,০০০-৪০,০০০ টাকা ইনকাম করা যায়। ব্যবসাতে খ্যাতি অর্জন করতে পারলে আরও বেশি ইনকাম হয়।
৬. ফটোগ্রাফি
ফটোগ্রাফি একটি সৌখিন ব্যবসা। আপনার ভালোলাগা থাকলে এ ব্যবসায় অনেক বেশি উন্নতি সম্ভব। নিজের পছন্দমতো ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা করতে চাইলে একটি ভালো ক্যামেরা নিয়েই শুরু করা যায় এই ব্যবসা।
বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ছবি তোলা, বিবাহ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে ভিডিও করা, প্রাকৃতিক ছবি বিক্রি করা ইত্যাদি উপায়ে এ ব্যবসায় লাভবান হওয়া যায়। ফটোগ্রাফি কোর্স করে শুরু করে দিতে পারেন।
ফটোগ্রাফি শুরু করতে প্রয়োজন হবে:
- একটি ভালো মানের ক্যামেরা ও ক্যামেরার এক্সেসরিজ। ৪০-৫০ হাজার টাকায় উন্নত ক্যামেরা পাওয়া যায়।
- ফটোগ্রাফির প্রতি নিজের আগ্রহ ও ভালোবাসা।
যত বেশি পরিশ্রম করবেন ততই ইনকাম করতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে ভালো ছবি বিক্রি করেও শত শত ডলার ইনকাম করছেন অনেকেই।
৭. ই-কমার্স ব্যবসা
বর্তমানে বাংলাদেশ ডিজিটালাইজেশন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই ব্যবসা হয়ে যাচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক এবং মানুষ নিজের অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে থাকে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট থেকে।
৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা করতে চাইলে আপনিও একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে বিভিন্ন বড় কোম্পানির পন্য বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন। ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির বিস্তারিত নিয়ম কানুন লেখাটি পড়লেই বুঝতে পারবেন।
ই-কমার্স ব্যবসার জন্য প্রয়োজন হবে:
- একটি ভালো মানের ই-কমার্স ওয়েবসাইট। ৩০-৩৫ হাজার টাকায় সম্পূর্ণভাবে ভালো একটি সাইট তৈরি করা যায়।
- মার্কেটিং সম্পর্কে ধারনা ও প্রচারনা।
ই-কমার্স সাইট সফলভাবে পরিচালনা করতে পারলে মাসে কয়েক হাজার থেকে লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা যায়।
৮. কফি শপ
ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা করতে চাইলে অনেকেই বেছে নেয় কফি শপের ব্যবসা। ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা টি শুরু করতে পারবেন। প্রথমেই একটি লোকালয়ের স্থানে একটি দোকাম নিয়ে তা হালকা ডেকোরেশন করে কফি মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হয়। কম ঝামেলাপূর্ন এই ব্যবসাতে অল্প খরচেই বেশি লাভ করা যায়।
কফি শপের জন্য প্রয়োজন হবে:
- একটি কফি মেশিন- ২০,০০০ টাকা।
- দোকান ভাড়া ৩-৫ হাজার টাকা।
- ডেকোরেশন ১০,০০০ টাকা।
- ওয়ান টাইম কাপ, কফি, দুধ ও অন্যান্য উপাদান- ৫,০০০ টাকা।
৯. স্টেশনারি দোকান
স্টেশনারির ব্যবসার চাহিদা সবসময়ই বিদ্যমান থাকে। স্কুল, কলেজের সামনে ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা টি শুরু করা লাভজনক। পাইকারি বাজার থেকে প্রয়োজনীয় স্টেশনারি পন্য নিয়ে নিজ এলাকায় খুচরা মূল্যে বিক্রয় করলে প্রায় ১৫-২০% লাভ করা যায়।
স্টেশনারি ব্যবসার জন্য প্রয়োজন হবে:
- একটি ছোট দোকান ভাড়া ৫ হাজার টাকা।
- প্রাথমিকভাবে স্টেশনারি পন্য ৪০,০০০ টাকা। ও
- দোকান ডেকোরেশন ৫,০০০ টাকা নিয়ে শুরু করা যায়।
পরবর্তীতে লাভের উপর নির্ভর করে ব্যবসার পরিসর বড় করা যায়।
১০. গিফট শপ
যুগোপযোগী একটি সুন্দর ব্যবসা হলো গিফট শপ। ব্যবসাটি বড় পুঁজির হলেও স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করতে চাইলেও ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা টি শুরু করা যায়। স্থানীয় বাজারে বা চাহিদা সম্পন্ন এলাকায় গিফট শপ ব্যবসা করলে লাভ ও হয় ভালো। তার জন্য প্রথমেই জানতে হবে ক্রেতার পছন্দ সম্পর্কে।
গিফট শপ ব্যবসার জন্য প্রয়োজন হবে:
- একটি ভালো স্থানে ছোট দোকান।
- উন্নত ও চাহিদাসম্পন্ন গিফট, শো-পিস।
- বাজার রিসার্চে দক্ষতা।
গিফট শপের কিছু কিছু গিফট পন্য থেকে দ্বিগুন লাভও করা যায়।