Alternative employment opportunities for street vendors – ফুটপাতের দোকানদারদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান
Alternative employment opportunities for street vendors – ফুটপাতের দোকানদারদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান
ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হলে লক্ষ লক্ষ দোকানির বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ফুটপাতের দোকানগুলো সাধারণত স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করা হয়, এবং এদের ওপর নির্ভরশীল অনেক পরিবার থাকে। এজন্য দোকানিদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে বিভিন্ন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিচে কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হলো:
১. নির্দিষ্ট মার্কেট বা শপিং জোন তৈরি
সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন নির্দিষ্ট জায়গায় ফুটপাত ব্যবসায়ীদের জন্য মার্কেট বা হকার্স কর্নার তৈরি করতে পারে। এতে করে তারা ফুটপাতে ব্যবসা না করে নির্দিষ্ট ও সুশৃঙ্খল এলাকায় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে।
এসব মার্কেটে ভাড়া কম রাখা এবং ব্যবসা শুরু করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
২. হকার্স ট্রেড লাইসেন্স প্রদান
ফুটপাতে দোকান বসানো বন্ধ করে, সরকারি অনুমোদিত লাইসেন্স সিস্টেম চালু করা যেতে পারে, যা হকারদের নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যবসা করার অনুমতি দেবে।
এতে করে ফুটপাত অবৈধভাবে দখল না করে একটি সুশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।
৩. স্মার্ট ভেন্ডিং সিস্টেম
উন্নত দেশগুলোতে স্মার্ট ভেন্ডিং সিস্টেমের ব্যবহার করা হয়, যেখানে মোবাইল বা ছোট ট্রাক ভেন্ডিং করে পণ্য বিক্রি করা যায়। বাংলাদেশেও এরকম ব্যবস্থা চালু করা যায়, যা হকারদের জন্য লাভজনক হতে পারে এবং পথচারীদের পথ অবরুদ্ধও হবে না।
৪. ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (SME) ঋণ প্রদান
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ (মাইক্রোফাইন্যান্স) অথবা SME ঋণ প্রদান করা যেতে পারে, যা দিয়ে তারা ছোট ধরনের ব্যবসা শুরু করতে পারবে, যেমন ছোট কারখানা, ওয়ার্কশপ বা সেবা-ভিত্তিক ব্যবসা।
এতে করে তারা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে।
৫. প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রোগ্রাম
হকার বা দোকানিদের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে, যেখানে তাদের নতুন কাজের দক্ষতা শেখানো হবে। যেমন, কারিগরি প্রশিক্ষণ, তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ, খাদ্য প্রস্তুতি বা অন্যান্য সেবা খাতের প্রশিক্ষণ।
এতে করে তারা নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।
৬. অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংযুক্তকরণ
অনলাইন ব্যবসা বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ও সহজ মাধ্যম। দোকানিদের জন্য বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন দারাজ, ফেসবুক শপ, বা নিজস্ব ওয়েবসাইটে পণ্য বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
স্থানীয় প্রশাসন বা এনজিও গুলো এই প্রক্রিয়ায় প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করতে পারে।
৭. নতুন শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
নতুন শিল্প স্থাপন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে, যেখানে দোকানিদের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এর জন্য গার্মেন্টস, ক্ষুদ্র কারখানা, বা রিসাইক্লিং শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারে সরকার।
এতে করে কর্মসংস্থানের পরিধি বাড়ানো সম্ভব।
৮. রাইড শেয়ারিং এবং ডেলিভারি সার্ভিসে অন্তর্ভুক্তি
ফুটপাতের দোকানিরা চাইলে রাইড শেয়ারিং বা ডেলিভারি সার্ভিসে অংশগ্রহণ করতে পারে। উবার, পাঠাও, বা ফুডপান্ডার মতো প্ল্যাটফর্মে তাদের নিবন্ধন করে কাজের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
উপসংহার
ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হলে শুধুমাত্র উচ্ছেদ করাই সমাধান নয়, বরং বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি না করলে দোকানিরা বেকার হয়ে পড়বে এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই সরকারের উচিত হকারদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করা, যাতে তারা নতুন সুযোগ পেয়ে সুশৃঙ্খলভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।