ডেলিভারি ভিসার ফাঁদ: সৌদিতে প্রবাসী শ্রমিকদের না বলা বাস্তবতা
⚠️ ডেলিভারি ভিসার ফাঁদ: সৌদিতে প্রবাসী শ্রমিকদের না বলা বাস্তবতা
Delivery Visa Trap
সৌদি আরবে প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন বাইরে থেকে যতটা উজ্জ্বল মনে হয়, ভিতরে তার চিত্র প্রায়ই সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ শেয়ার করছি কয়েকজন প্রবাসী ভাইয়ের হৃদয়বিদারক বাস্তব অভিজ্ঞতা — যেন অন্যরা একই ভুল পথে না হাঁটে।
🇸🇦 এক প্রবাসীর গল্প: দুই বছর কেটে গেল, এক টাকাও দেশে পাঠাতে পারিনি 😢
একজন ভাই জানালেন —
“আমি সৌদিতে দুই বছর ধরে আছি। শুরুতে লাইসেন্স করাতে সময় লাগে দুই মাস, ফলে কাজ শুরু করতে দেরি হয়। পরে রমজান মাসে এক ভয়াবহ বাইক এক্সিডেন্টে বাম হাত ভেঙে যায়।
অনেকদিন পর সুস্থ হয়ে কাজে ফিরলাম, কিন্তু কোম্পানি বলল ‘টার্গেট পূরণ না হওয়ার কারণে বেতন পাবেন না’।
এরপর কফিল আমার নামে ১৫,০০০ রিয়ালের মামলা দিলেন এবং আমার পাসপোর্ট নিয়ে নিলেন। এখন দেশে ফেরার কোনো উপায় নেই। দুই বছর কেটে গেল, কিন্তু পরিবারের কাছে এক টাকাও পাঠাতে পারিনি…” 😭
⚖️ কফিলের মামলা, ঘুষ আর ফাঁদ
আরেকজন ভাই জানালেন —
“আমার কফিল প্রথমে ১৫,০০০ রিয়ালের মামলা দিল। পরে কিছু টাকা নিয়ে মামলা তুলে নিলেও, অনেক ঝামেলা করে এক্সিট নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির শেষ নেই।”
আরেক ভাই বলেন —
“একদিন কফিল আমাকে একটি ফর্মে সই করতে বললো। সন্দেহ হওয়ায় গোপনে ফটো তুলে গুগলে অনুবাদ করলাম। সেখানে লেখা ছিল — ‘আমি ওর কাছ থেকে ৫০,০০০ রিয়াল নিয়েছি’।
সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যাই এটা একপ্রকার ফাঁদ! আল্লাহর রহমতে গাড়ির চাবি দিয়ে পালিয়ে এসে প্রাণে বেঁচে যাই।”
🚫 রিয়াদের এক রাইডারের অভিজ্ঞতা
রিয়াদে এক ডেলিভারি রাইডার জানালেন —
“ছোট কোম্পানিগুলো শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন দেয় না। অত্যধিক ‘টার্গেট’ দেয়, টার্গেট পূরণ না হলে বেতন কেটে নেয় বা পুরোটা আটকে রাখে। দুর্ঘটনা হলে শ্রমিকের উপরই চাপিয়ে দেয় জরিমানা, পুলিশ কেস, এমনকি ভুয়া অভিযোগ।”
তিনি আরও বলেন,
“আমার পরিচিত অনেক ভাই বাইক এক্সিডেন্টে আহত হয়েছে, কেউ কেউ স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে। এই কাজটা কেউ করবেন না; পাথর ভাঙার কাজ করলেও ডেলিভারি করবেন না।” 🙏
🔥 প্রবাসীদের জন্য জরুরি সতর্কবাণী
এই অভিজ্ঞতাগুলো থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারি। যারা সৌদিতে ডেলিভারি ভিসায় আসতে চান বা ইতিমধ্যে আছেন — তাদের জন্য নিচে কিছু জরুরি সতর্কতা তুলে ধরা হলো।
🧾 ১️⃣ কোনো সাদা কাগজে আঙুলের ছাপ বা স্বাক্ষর করবেন না
কোনো কাগজে স্বাক্ষর, আঙুলের ছাপ, অথবা Nafath ভেরিফিকেশন কোড কাউকে দিবেন না। এগুলোর মাধ্যমেই অনেক সময় ভুয়া চুক্তি বা ঋণনামা তৈরি করে ফাঁসানো হয়।
🏍️ ২️⃣ কোম্পানির চাপে অতি-রিস্কি ড্রাইভ করবেন না
বেশিরভাগ কোম্পানি “টার্গেট” পূরণের জন্য রাইডারদের জীবন নিয়ে খেলা করে। মনে রাখবেন — জীবনের দাম টার্গেটের চেয়ে বেশি। দুর্ঘটনা হলে কোম্পানি পাশে থাকবে না, দায়ভার আপনারই কাঁধে পড়বে।
💰 ৩️⃣ বেতন কাটার বা মামলা করার কৌশল জেনে রাখুন
অনেক কোম্পানি টার্গেট পূরণ না হলে বেতন কেটে রাখে বা পরবর্তীতে “ক্ষতিপূরণ” নামে মামলা দেয়। চাকরিতে যোগদানের আগে চুক্তির শর্তগুলো ভালোভাবে জেনে নিন।
🛂 ৪️⃣ পাসপোর্ট কখনো হাতে দেবেন না
আপনার পাসপোর্ট যদি কোম্পানি বা কফিল নিয়ে নেয়, তা অবিলম্বে বাংলাদেশ দূতাবাস বা কনস্যুলেটে রিপোর্ট করুন। এটি আপনার একমাত্র আইনি পরিচয় এবং নিরাপত্তা।
🧠 ৫️⃣ কোনো ফর্মে স্বাক্ষরের আগে অনুবাদ করে নিন
সন্দেহজনক কোনো কাগজ বা ফর্মে সই করার আগে তা অনুবাদ করে নিন (গুগল ট্রান্সলেটেও সম্ভব)। না বুঝে কোনো স্বাক্ষর জীবনভর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
📁 ৬️⃣ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের কপি রাখুন
পাসপোর্ট, ইকামা, কোম্পানি চুক্তি, কফিলের নম্বর, এবং জরুরি কন্টাক্ট নম্বরের কপি সবসময় নিজের কাছে রাখুন। অনলাইনে বা ইমেইলে ব্যাকআপ রাখলে আরও নিরাপদ।
🤝 ৭️⃣ অভিজ্ঞ প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ রাখুন
স্থানীয় প্রবাসী কমিউনিটিতে অভিজ্ঞদের সাথে যুক্ত থাকুন। কোথায় আইনগত সহায়তা পাওয়া যায়, কোন প্রতিষ্ঠান সাহায্য করে — আগে থেকেই জেনে রাখুন।
🚷 ডেলিভারি ভিসা নেয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন
ডেলিভারি কাজটি বাইরে থেকে সহজ মনে হলেও, এটি শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অল্প বেতনের বিনিময়ে জীবনের ঝুঁকি নেওয়া কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
আপনি যদি প্রবাসে আসার পরিকল্পনা করেন, আগে কাজের ধরন, কোম্পানির রেপুটেশন ও চুক্তির শর্ত ভালোভাবে যাচাই করুন।
✍️ শেষ কথা
প্রবাস জীবনে প্রতিটি সিদ্ধান্ত খুব মূল্যবান। এক মুহূর্তের ভুল সিদ্ধান্ত সারা জীবনের অনুশোচনার কারণ হতে পারে।
যারা ইতিমধ্যে ভুক্তভোগী হয়েছেন, অনুগ্রহ করে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন, যেন অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে এবং নিরাপদ থাকতে পারে।
🤲 আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল উপার্জন ও নিরাপদ জীবিকা দান করুন।
#প্রবাসী #ডেলিভারি #ভিসা #সৌদি #সতর্কতা #বাস্তব_গল্প #MahbubOsmane